ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের ইতিহাস ও পরিচিতি:
ব্রিটিশ সরকার এদেশে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করার পর জমিদারগণ ভূমির মালিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। তারা প্রজাচাষীর ভাল-মন্দ, সুখ-দু:খ, সুযোগ সুবিধার দিকে মোটেও তাকাত না। ফলে কৃষকের অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে। অনেকে কৃষি কর্ম ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে থাকে। ফলে কৃষি জমি অনাবাদি থাকার উপক্রম হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেয়। ইত্যাকার কারণে ইংরেজদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে এবং কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় এ আইন প্রণয়নের চিন্তা করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৭৫ সনে ইংরেজ সরকার বঙ্গীয় সার্ভে আইন পাশ করে। কিন্ত কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় এ আইন যথেষ্ট না হওয়ায় ১৮৮৫ সনে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন প্রণয়ন করা হয়। ১৮৮৩ সনের ২ মার্চ আইনটি ভারতীয় আইন সভায় পেশ করা হয় এবং ১৮৮৫ সনে তা অনুমোদন লাভ করে। উল্লিখিত আইনের অধীনে খতিয়ান প্রণয়ন কাজ পর্যালোচনার জন্য ১৮৮৪ সনে ভূমি রেকর্ড ও কৃষি নামে একটি দপ্তর সৃষ্টি করা হয়। দপ্তরটির নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয় বোর্ড অব রেভিনিউর হাতে। ১৮৮৮ সনে কৃষি একটি স্বতন্ত্র দপ্তর হিসেবে গঠিত হওয়ায় দপ্তরটি ভূমি রেকর্ড দপ্তর নামে পরিচিতি লাভ করে। তখন জরিপ কাজ পরিচালনা করত সার্ভে অব ইন্ডিয়া নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান।
১৯১৯ সনে জরিপের কাজ ভূমি রেকর্ড দপ্তরের উপর ন্যস্ত করা হয় এবং দপ্তরটিকে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ পরিদপ্তর নামে অভিহিত করা হয় যার সদর দপ্তর কোলকাতায় স্থাপিত হয়। ১৯৪৭ সনের দেশ বিভাগের পর অস্থায়ীভাবে বরিশাল জেলায় ব্রাউন কম্পাউন্ডে জরিপ বিভাগের অফিস স্থাপন করা হয়। ১৯৫৩ সনে টিপু সুলতান রোড হতে জরিপ অফিস বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭৫ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সরকারের আমলে এটি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে রূপান্তরিত হয় এবং এর কার্যক্রমের পরিধি বহুলাংশে বৃদ্ধি পায় এবং অফিসের নাম করণ করা হয় ‘ডিপার্টমেন্ট অব ল্যান্ড রেকর্ডস এন্ড সার্ভেস। তখন হতে ১৯৭৪ সন পর্যন্ত উপসচিব পদ মর্যাদার একজন পরিচালকের অধীনে এ পরিদপ্তরের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৭৫ সনে যুগ্মসচিব পদ মর্যাদার একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে পরিদপ্তরটি অধিদপ্তরে রূপান্তরিত হয়। তখন থেকে মহাপরিচালকের অধীন উপসচিব পদ মর্যাদার ২ জন পরিচালক যথাক্রমে (১) পরিচালক (ভূমি রেকর্ড) ও (২) পরিচালক (জরিপ) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সনে প্রশাসনিক সংস্কার সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে আরও একটি পরিচালক (প্রশাসন) এর পদ সৃষ্টি হয় এবং মহাপরিচালক পদটি অতিরিক্ত সচিব পদ মর্যাদায় উন্নীত করে পরিচালকের ৩টি পদ যুগ্নসচিব পদ মর্যাদায় উন্নীত করা হয়।
১৯৮৪ সনের পূর্ব পর্যন্ত স্বাধীনতা উত্তর এদেশে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা ও দিয়ারা সেটেলমেন্ট, ঢাকার অধীনে অস্থায়ী সেটআপের ভিত্তিতে আর,এস জরিপ পরিচালিত হয়। ১৯৮৪ সনের নিকার এর প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একজন উপসচিব পদ মর্যাদার কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে কুমিল্লা, নোয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর, বরিশাল, যশোর, সিলেট, রংপুর, বগুড়া ও টাঙ্গাইল এ ১০ টি স্থায়ী জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস এবং এর অধীনে ২০৯ টি উপজেলায় স্থায়ী উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস সৃষ্টি করা হয়।
২০১১ সনে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও পাবনা রিভিশনাল সেটেলমেন্ট বিলুপ্ত করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, পাবনা, দিনাজপুর, পটুয়াখালী ও জামালপুর আরও ৯টি জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস এবং এর অধীনে ২০০ টি উপজেলায় স্থায়ী উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস স্থাপন করা হয়।
অধিদপ্তরে রূপান্তর
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংযুক্ত বিভাগ।
বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের (১৮৮৫) অধীন ভূমির মালিকানা সম্পর্কিত ম্যাপ ও খতিয়ান প্রণয়ন কাজ পরিচালনার লক্ষ্যে “বোর্ড অব রেভিনিউ” এর নিয়ন্ত্রণাধীন “ভূমি রেকর্ড ও কৃষি” নামে দপ্তর সৃষ্টি হয় ১৮৮৪ সালে।
১৮৮৮ সালে “ভূমি রেকর্ড দপ্তর” নামে একটি স্বতন্ত্র দপ্তর গঠন করা হয়। তখন জরিপ কাজ “সার্ভে অব ইন্ডিয়ার” উপর ন্যস্থ ছিল।
১৯১৯ সালে জরিপের কাজ ভূমি রেকর্ড দপ্তরের উপর ন্যস্থ হয় এবং এটি ভূমি রেকর্ড ও জরিপ পরিদপ্তর হিসাবে রূপান্তরিত হয়।
১৯৭৫ সালে এটি একটি অধিদপ্তরে উন্নিত করা হয় এবং অফিসের নাম করণ করা হয় “ডিপার্টমেন্ট অব ল্যান্ড রেকর্ডস এন্ড সার্ভেস”।
অধিদপ্তরে স্থানান্তর
সি.এস জরিপের সময় সার্ভে ও সেটেলমেন্ট বিভাগের প্রধান অফিস ছিল কোলকাতায়। দেশ বিভাগের পর অস্থায়ী ভাবে বরিশাল জেলার “ব্রাউন কম্পাউন্ড” জরিপ বিভাগের অফিস স্থাপন করা হয়। তখন সেটেলমেন্ট প্রেস ছিল রংপুরে।
পরবর্তীতে বরিশাল জেলা হতে জরিপ অফিস ঢাকার ওয়াজ ঘাট নবাব এষ্টটের বাড়িতে ও আরো কিছুদিন পর টিপুসুলতান রোডের(ওয়ারী) ভাড়া বাড়িতে এবং অধিদপ্তর ভবন নির্মাণ সমাপ্ত হলে ১৯৫৩ সালে বর্তমান স্থানে (তেজগাঁও) এ অধিদপ্তর টি স্থানান্তর করা হয়। এর কিছুদিন পর সেটেলমেন্ট প্রেস ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
ভিশন
বর্তমানে গণতান্ত্রিক সরকার ঘোষিত “রুপকল্প-২০২১” অনুসরণে তথ্য প্রযুক্তির প্রসার ঘটিয়ে ভূমি জরিপ ও রেকর্ড ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাইজ করার মাধ্যমে ক্রটিমুক্ত,জনবান্ধব,টেকসই এবং জনকল্যাণমুখী আধুনিক ভূমি জরিপ ও প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
মিশন
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের কার্যপরিধিঃ
ক) একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সমগ্র দেশ, কোন জেলা অথবা জেলার কোন অংশের স্বত্বলিপি এবং মৌজা ম্যাপ প্রস্তুত/সংশোধন করবার লক্ষ্যে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ পরিচালনার জন্য প্রকল্প প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন।
খ) পর্যায়ক্রমে সমগ্র দেশের প্রতিটি মৌজার প্রতিটি ভূখন্ড জরিপ করে ভূমি রেকর্ড ও মৌজার ম্যাপ প্রস্তুত/সংশোধন করা।
গ) দেশের প্রতিটি ভূমি মালিকের রেকর্ড-অব-রাইটস বা স্বত্বলিপি (খতিয়ান) প্রণয়ন এবং মুদ্রণের কাজ।
ঘ) দেশের প্রতিটি মৌজার, উপজেলার, জেলার এবং সমগ্র দেশের ম্যাপ প্রস্তুত, মুদ্রণ এবং পুনঃমুদ্রণ করা।
ঙ) মৌজার ম্যাপ প্রস্তুত করার জন্য থিওডোলাইট ও জিপিএস মেশিনের মাধ্যমে কন্ট্রোল পয়েন্ট নির্ধারণ করা।
চ) বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা চিহ্নিত করা, সীমানা স্ট্রিপ ম্যাপ প্রস্তুত এবং তা মুদ্রণ করা।
ছ) আন্তঃবিভাগীয় সীমানা বিরোধ নিস্পত্তি করা।
জ) আন্তঃজেলা এবং আন্তঃউপজেলা সীমানা বিরোধ নিস্পত্তি ও নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে কারিগরী সহায়তা প্রদান করা।
ঝ) জেলা/উপজেলা পুনর্গঠন সংক্রান্ত সরকারী প্রস্তাবে কারিগরী ও ভৌগলিক গ্রহণযোগ্যতার বিষয় নিরীক্ষা করা।
ঞ) প্রতি বছর বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন/পুলিশ/বন) ক্যাডারসহ বিচার বিভাগীয় অফিসারগণের সার্ভে ও সেটেলমেন্ট ট্রেনিং এর আয়োজন করা এবং ট্রেনিং প্রদান করা।
ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কাঠামো
Website: http://www.dlrs.gov.bd/